Summary
যেখানে পদার্থ আছে, সেখানে রসায়নও রয়েছে। বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে। মাটির উপরিভাগেও এই পরিবর্তন অন্তহীন। সুদূর অতীতে পৃথিবী ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং জীবহীন। কোটি কোটি বছরের রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডল, পানি এবং নানা পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে, যা পৃথিবীকে জীবজগতের জন্য বাসযোগ্য করেছে। মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহ রাসায়নিক উপাদানে তৈরি, যেখানে নিত্য নতুন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে মানুষ অনেক পদার্থ ও সামগ্রী তৈরি করছে।
নিচে রসায়নের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের উদাহরণ দেওয়া হলো:
| বস্তু/পদার্থ | উপাদান | উৎস ও রাসায়নিক পরিবর্তন |
|---|---|---|
| বায়ু | প্রধানত অক্সিজেন | বায়ুর অক্সিজেন খাদ্য উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপাদন করে। |
| খাবারের পানি | পানিসহ বিভিন্ন খনিজ লবণ | পানি শরীরের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এবং দ্রাবক হিসেবে কাজ করে। |
| সার | নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম | এই মৌলগুলো উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে। |
| কাগজ | সেলুলোজ | কাগজের জন্য সেলুলোজ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। |
যেখানে পদার্থ আছে সেখানেই রসায়ন আছে। বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ থাকে। বায়ুমণ্ডলে কিছু না কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন অনবরত ঘটছে। আমরা যে মাটির উপরে বসবাস করছি সে মাটিতেও প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাচ্ছে অসংখ্য পরিবর্তন। শুধু বর্তমান সময় কেন, সুদূর অতীতেও এই পরিবর্তন ঘটেছে। যখন এ পৃথিবীর প্রথম জন্ম হলো তখন পৃথিবী এমন ছিল না, পৃথিবী ছিল খুবই উত্তপ্ত। সেখানে কোনো বাতাস ছিল না। ছিল না কোনো জীবের অস্তিত্ব। কোটি কোটি বছর ধরে ঘটেছে অসংখ্য রাসায়নিক পরিবর্তন। সৃষ্টি হয়েছে বায়ুমণ্ডল, সৃষ্টি হয়েছে পানি, সৃষ্টি হয়েছে হাজারো রকমের পদার্থ। এই সবকিছু মিলে পৃথিবীকে জীবজগতের জন্য বসবাস উপযোগী করেছে। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ তা ক্ষুদ্র অণুজীব ( যেমন— ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা ইত্যাদি) হোক আর বৃহৎ উদ্ভিদ বা প্রাণীই হোক সকলের দেহই বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। প্রতিটি দেহ হলো এক একটি বড় রাসায়নিক কারখানা। এখানে প্রতি মুহূর্তেই ঘটে চলেছে অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া। আর সে জন্যই আমরা বেঁচে আছি। আবার, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করে চলেছে আমাদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী। যেমন— তুমি যে জামাকাপড় পরছো, যে পেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছো, যে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছ বা ত্বকে যে কসমেটিকস ব্যবহার করছো তা সবই রসায়নের অবদান। এছাড়া আমরা পরিষ্কারের কাজে সাবান, টয়লেট ক্লিনার, এবং জীবন রক্ষার জন্য ব্যবহার করছি বিভিন্ন ধরনের ওষুধসামগ্রী। আমাদের খাদ্য চাহিদাকে পূরণ করার জন্য ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করছি সার ও কীটনাশক। যানবাহনে ব্যবহার করছি পেট্রল, ডিজেল- এসবই শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি রসায়নের পরিধি এ ক্ষুদ্র পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না। 1.02 টেবিলের সাহায্যে রসায়নের কিছু অতি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের উদাহরণ দেওয়া হলো—
|
বস্তু/পদার্থ |
উপাদান | উৎস ও রাসায়নিক পরিবর্তন |
| বায়ু | প্রধানত অক্সিজেন | আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় যে বায়ু গ্রহণ করি সেই বায়ুর | অক্সিজেন শরীরের ভেতরে খাদ্য উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপাদন করে। |
| খাবারের পানি | পানিসহ বিভিন্ন খনিজ লবণ। | পানি আমাদের শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এটি শরীরের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থের দ্রাবক হিসেবেও কাজ করে। জীবের শরীরের বেশির ভাগই পানি। শরীরের | বিষাক্ত পদার্থ এ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে প্রস্রাব ও ঘামের সাহায্যে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। খাবারের পানিতে পানি ছাড়াও | বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ধাতুর লবণ থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। |
| সার | নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন,ফসফরাস,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম | উল্লিখিত মৌলগুলো উদ্ভিদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। বিভিন্ন সারে এসব মৌলের যৌগ থাকে। তাই বিভিন্ন ধরনের সার উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে। ফলে ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। |
| কাগজ | সেলুলোজ | কাগজের আবিষ্কার মানব সভ্যতার এক অনন্য অবদান। বাঁশ, | আখের ছোবড়া ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে সেলুলোজ থাকে। কাগজ তৈরির কারখানায় এই সমস্ত বস্তুকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজ তৈরি করা হয়। |
Read more